আর এ পরীক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালের অতিরিক্ত ব্যয় অনেকের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের সকল নাগরিকের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যয় সরকারের বহন করা উচিত।
দেশে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির মধ্যেও এ ভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের এখন বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করানোর জন্য প্রায় চার হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে, যেখানে যদিও কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য মনোনীত সরকারি হাসপাতাল এবং সরকারের অধীনে সারা দেশে স্থাপন করা ল্যাবগুলোতে এ সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালে সেবাপ্রার্থীদের দীর্ঘ সারি এবং অতিরিক্ত কিছু ঝামেলার কারণে বহু মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু সেখানকার বিশাল আর্থিক বোঝা নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষদেরকে তাদের প্রাপ্য চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করছে।
আরও পড়ুন: সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে একযোগে কাজ করতে হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ-এর আহ্বায়ক ডা. রশিদ-ই মাহবুব ইউএনবিকে বলেন, ‘দেশে যেকোনো মহামারি হলে জনগণকে রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। দেশে এখন করোনা মহমারি চলছে। এখন রাষ্ট্র্রের দায়িত্ব সকল নাগরিকে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এটি সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।’
তিনি বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার এ খরচ সরকারের বহন করা উচিত। খরচ বহন করে সরকার চাইলে তদারকি করতে পারে যে করোনা পরীক্ষার খরচ বেসরকারি হাসপাতাল সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা।’
সম্প্রতি করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডির আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে চার হাজার টাকা দিয়ে একটি করোনা পরীক্ষা করানো রহমান নামে এক রোগী ইউএনবিকে বলেন, ‘এই মহামারিতে মধ্যবিত্ত অনেক মানুষের এতো টাকা দিয়ে করোনা টেস্ট করা কষ্টকর। সরকারি হাসপাতালগুলোতে অনেক বেশি সিরিয়াল থাকায় আমি বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়েছি।’
তিনি বলেন, সরকার চাইলে বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার খরচ বহন করতে পারে। তাতে অনের গরীব ও মধ্যবিত্ত মানুষের খুবই উপকার হবে।
এ বিষয়ে জনস্বাসহ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফায়জুল হাকিম ইউএনবিকে বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ পরীক্ষার খরচ সরকারকে বহন করতে হবে। সকল মানু্যের চিকিৎসা ও টেস্ট সম্পূর্ণ ফ্রি করতে হবে, সেটি সরকারি বা বেসরকারি যে হাসপাতালই হোক।’
আরও পড়ুন: করোনায় বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬৩,৯৯৯
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান ইউএনবিকে বলেন, কোভিড-১৯ টেস্ট সরকারি হাসপাতালগুলোতে ফ্রি করে করে দেয়া হয়েছে। এতে প্রতিটি টেস্টে সরকারের খরচ হয় ৪ হাজার টাকা।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষার খরচ সরকারের পক্ষ থেকে বহন করার কোন পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও এ ধরণের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। যারা বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে পারছেন না, তারা সরকারি হাসপাতালে টেস্ট করাবে।’
হাবিবুর রহমান খান আরও তিনি বলেন, রোগীর চাপ বেশি থাকায় সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি ১৪টি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ পরীক্ষার খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। আর কেউ যদি নিজ বাসা থেকে স্যাম্পেল কালেকশন করে পরীক্ষা করাতে চান তাহলে অতিরিক্ত আরও ১ হাজার টাকা দিতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এক আদেশে ১৪টি বেসরকারি হাসপাতাল/ডায়াগনস্টিকস সমূহকে শর্তসাপেক্ষে নমুনা সংগ্রহ ও কোভিড-১৯ পরীক্ষার অনুমতি প্রদান করা হয়। শর্তগুলো হল:
- আইপিসি নিশ্চিতকরণসহ ভর্তি হওয়া রোগীদের ও বহি:বিভাগে সংযুক্ত বর্নণা মোতাবেক উক্ত আরটি-পিসিআর পরীক্ষাটি করতে হবে।
- বিভাগ ও বহি:বিভাগে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা বাবদ সর্বোচ্চ তিন হাজার ৫০০ টাকা নেয়া যাবে।
- যেসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহে পরীক্ষার মাধ্যমে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের সুবিধা নেই, তাদের নমুনা সমূহ অনুমতি প্রাপ্ত বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকস সমূহে আলোচনার ভিত্তিতে পরীক্ষা করবে।
- এক্ষেত্রে যেসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, সেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহে নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নেয়া যাবে ।
- যেসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছে, সেসব ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহ বাবদ সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা নেয়া যাবে।
- উক্ত অনুমতিপ্রাপ্ত বেসসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সমূহকে নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে সম্পাদিত সকল পরীক্ষা সমন্বিত ফলাফল আবশ্যিকভাবে ল্যাব কল সেন্টারে প্রেরণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য অনুমোদন প্রাপ্ত ১৪টি হাসপাতাল হলো:
এভার কেয়ার হাসপাতাল ঢাকা, স্কয়ার হাসপাতাল ঢাকা, প্রভা হেলথ বাংলাদেশ লিমিটেড ঢাকা, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল, বায়োমেড ডায়াগনস্টিকস, ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব ও ডায়াগনস্টিকস, ল্যাব এইড হাসপাতাল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেস জেনারেল হাসপাতাল, কেয়ার মেডিকেল কলেজ, টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ, রাফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতাল, বগুড়া এবং শেভরন ক্লিনিকাল ল্যাবরেটরি (পিটিই) লি:, চট্টগ্রাম।